আব্দুর রশিদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। নিয়মিত কর পরিশোধ করেন তিনি। এবারও কর দিতে চান। কিন্তু কর প্রদানে যে ছাড় বা রেয়াত সুবিধা পাওয়া যায়, তা জানেন না এ ব্যাংকার।
কোথায় কোথায় কর ছাড় আছে, কীভাবে এ সুবিধা নিতে হয় তা জানা অতি সহজ। যে অফিসে করদাতা তার আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন, সেখান থেকে একটি বই সংগ্রহ করতে পারেন। নাম “আয়কর পরিপত্র’’। কোন খাতে কর ছাড় পাওয়া যায়, কীভাবে এ সুযোগ নেয়া যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে এতে।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্র, জীবনবিমা, শেয়ারবাজার, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ কমপক্ষে ২৩টি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আব্দুর রশিদের মতো অন্য করদাতারা চাইলে সরকারের দেয়া কর ছাড়ের এসব সুবিধা নিতে পারেন।
এতে করের চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। করদাতা নিজে ফরম পূরণ করে রিটার্নের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়ে এসব সুবিধা নিতে পারেন অথবা কর আইনজীবীর সহায়তা নিতে পারেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) থেকে পরিপত্র সংগ্রহ করা যায়। কেউ চাইলে টাকার বিনিময়ে কিনতে পারেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ের সামনে অথবা আদালতপাড়ায় বিভিন্ন স্টলে খুঁজলে তা পাওয়া যাবে। প্রতি বছর বাজেটের পর আয়কর পরিপত্র প্রকাশ করে এনবিআর।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে করছাড় বা রেয়াত সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এ সুবিধা পেতে হলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকৃত অঙ্ক আয়কর রিটার্নে অবশ্যই দেখাতে হবে। কত টাকার বিনিয়োগ করলে কত হারে ছাড় পাওয়া যায়, পরিপত্রে তা উল্লেখ আছে।
বর্তমান আইনে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়াগ করলে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়।
ব্যাংকার আব্দুর রশিদের কথাই ধরা যাক। এ বছর চাকরি ও অন্যান্য উৎস থেকে তার মোট আয় হয় ১০ লাখ টাকা। এর বাইরে ব্যাংকে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা আছে।
নিয়ম অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্য তিনি ১৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ ৭৫ হাজার টাকা রেয়াত পাবেন। ফলে মূল আয় থেকে তা বাদ দিলে তার নীট আয় কমে দাঁড়াবে (১০,০০০০-৭৫,০০০) ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর ওপর প্রযোজ্য হারে সরকারকে কর পরিশোধ করবেন আব্দুর রশিদ।
সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি একটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তার ছোট মেয়ের জন্য আট লাখ টাকার বিমা করা আছে। এর জন্য বার্ষিক ২০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দেন তিনি। জীবনবিমার জন্যও কর ছাড়ের সুযোগ দিয়েছে সরকার। বিমার বিপরীতে যে পরিমাণ প্রিমিয়াম পরিশোধ করেছেন, তার সমপরিমাণ রেয়াত পাবেন আব্দুর রশিদ।
এনবিআরের কর্মকর্তা বলেন, সরকার নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়। তবে এসব সুবিধা পেতে হলে প্রমাণ হিসেবে আয়কর রিটার্নে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে।
এসব সুবিধা স্থায়ী নয়। প্রতি বছর বাজেটে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। কিছু সুবিধা বাদ দেয়া হয়। আবার কিছু নতুন যুক্ত করা হয়।
কর ছাড়ে বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হলো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, ট্রেজারি বন্ড, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ তহবিলে অনুদান, পেনশন স্কিম ইত্যাদি।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে দান করলেও কর রেয়াত পাওয়া যায়। এর মধ্যে জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, জাকাত তহবিল, প্রতিবন্ধী কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, আগাখান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক, আহছানিয়া ক্যানসার হাসপাতাল, সিআরপি এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রদত্ত দান উল্লেখযোগ্য।